সরবরাহ না বাড়ালে বিপর্যয়ের আশঙ্কা শেয়ারবাজারে
শেয়ারবাজারের ধারাবাহিক ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দেশের দুই স্টক এক্সচেঞ্জের নেতারা। তাঁরা সরকার ও বিনিয়োগকারীদের সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, চাহিদা ও সরবরাহের ব্যাপক ঘাটতির মধ্যে বাজারের ঊর্ধ্বগতি অব্যাহত থাকলে যেকোনো সময় বড় ধরনের বিপর্যয় দেখা দিতে পারে। আর যদি সে ধরনের কোনো ঘটনা ঘটে থাকে তাহলে তার কোনো দায়দায়িত্ব স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষ নেবে না। বিপর্যয়ের দায়দায়িত্ব সরকারকেই বহন করতে হবে। সেই সঙ্গে বাজারে শেয়ার সরবরাহ বাড়াতে বহুল আলোচিত সরকারি মালিকানাধীন ২৬টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দ্রুত বাজারে আনতে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন দুই স্টক এক্সচেঞ্জের নেতারা।
গতকাল শনিবার ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সেচেঞ্জের (ডিএসই-সিএসই) যৌথ এক সংবাদ সম্মেলনে এ উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। রাজধানীর মতিঝিলের পূর্বাণী হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শেয়ারবাজারের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেন ডিএসই সভাপতি শাকিল রিজভী ও সিএসই সভাপতি ফখরুদ্দিন আলী আহম্মদ। এ সময় দুই স্টক এক্সচেঞ্জের একাধিক পরিচালকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।সংবাদ সম্মেলনে বাজারের স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে দ্রুততার সঙ্গে শেয়ারের সরবরাহ বাড়ানোর তাগিদ দেওয়া হয়। আর এ জন্য সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন নেতারা। সিএসই সভাপতি বলেন, বারবার ঘোষণা দেওয়ার পর অজানা কারণে সরকারি ২৬ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার এখনো বাজারে আসছে না। কাদের স্বার্থ সংরক্ষণে এসব কম্পানির শেয়ার বাজারে ছাড়া হচ্ছে না, তা খতিয়ে দেখার সময় এসেছে। ওইসব কম্পানির শেয়ার ছাড়ার ব্যাপারে এখন প্রধানমন্ত্রীকেই উদ্যোগ নিতে হবে। তা না হলে চাহিদা ও সরবরাহ ঘাটতি কাটবে না। এই ঘাটতি না কমলে বড় ধরনের দুর্ঘটনার ঝুঁকিতে পড়বে বাজার। যার দায়দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে।
ডিএসই সভাপতি শাকিল রিজভী সরবরাহ বাড়াতে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে তালিকাভুক্ত সরকারি কম্পানির ৪৯ শতাংশ শেয়ার বাজারে ছাড়ার দাবি জানান। একই সঙ্গে তিনি অবকাঠামো, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে নতুন কম্পানি গঠনের মাধ্যমে বাজার থেকে অর্থ সংগ্রহের জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান।
সংবাদ সম্মেলনে বিনিয়োগকারীদেরও সতর্ক করে দিয়েছেন দুই সংস্থার নেতারা। তাঁরা বলেছেন, সম্প্রতি বিনিয়োগ অনুপযোগী শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের অতি আগ্রহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এর ফলে পে-আউট বা রিটার্ন নেই এমন শেয়ারের দামও হু হু করে বাড়ছে। এ অবস্থায় সম্ভাব্য লোকসানের দায় বিনিয়োগকারীকেই বহন করতে হবে। কোনো বিনিয়োগকারীর ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগের দায় ডিএসই-সিএসই নেবে না। এ কারণে বিনিয়োগকারীর বিনিয়োগ করা অর্থের প্রথম রেগুলেটর তাকেই হতে হবে। বিনিয়োগের আগে অতিমাত্রায় সতর্ক থাকতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা।
সংবাদ সম্মেলনে স্টক এক্সেচেঞ্জের নেতারা বলেন, মৌলভিত্তির বা ভালো কম্পানির শেয়ারের দাম বাড়ার ফলে সূচক বাড়লে তা নিয়ে উদ্বেগের কিছু নেই। উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে শেয়ারের মূল্য আয়ের অনুপাত (পিই রেশিও)। বর্তমানে বাজারে তালিকাভুক্ত এমন অনেক কম্পানি রয়েছে যেগুলোর পিই রেশিও ৭০-৮০ এর ওপরে, যা কখনোই স্থায়ী হবে না। এসব খাতে বিনিয়োগের ধারা অব্যাহত থাকলে বাজারে বিপর্যয় নেমে আসবে।
এদিকে শেয়ারের সরবরাহ সংকটের সুযোগে নামসর্বস্ব কোনো কম্পানি যাতে বাজারে আসতে না পারে, সে ব্যাপারে সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন ডিএসই ও সিএসই নেতারা। শাকিল রিজভী বলেন, '১৯৯৬ সালে অনেক বাজে কম্পানি বাজারে চলে এসেছিল। যেগুলো বর্তমানে জেড গ্রুপে আছে। সেসব কম্পানিকে যারা বাজারে নিয়ে এসেছিল বা ইস্যু ব্যবস্থাপনার কাজে যুক্ত ছিল, তাদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনা দরকার।' সংবাদ সম্মেলনে আরো বলা হয়, বর্তমান বাজারে নিয়ন্ত্রক সংস্থার নিয়ন্ত্রণ খুবই দরকার। বাজার নিয়ন্ত্রণে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সেচেঞ্জ কমিশন (এসইসি) যেসব সিদ্ধান্ত নেবে তা সবাইকে পরিপালন করতে হবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে কোনো অবস্থাতেই চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলা যাবে না। এসইসির কর্মকাণ্ড চ্যালেঞ্জের মুখে পড়লে তাতে দেশের অর্থনীতি, বিনিয়োগকারী সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। প্রতিষ্ঠানটিকে যত মর্যাদার জায়গায় রাখা যাবে, ততই বিনিয়োগকারীর স্বার্থ সুরক্ষিত হবে। বাজারের স্বার্থে নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা আরো জোরদার করতে এসইসির লোকবল সংকট দূর করতে সরকারের কাছে আহ্বান জানান ডিএসই ও সিএসই নেতারা।সংবাদ সম্মেলনে ওটিসি মার্কেটের লেনদেনকে সহজ করতে এটির আইনি কাঠামোর পরিবর্তন ও বন্ড মার্কেটকে জনপ্রিয় করারও সুপারিশ করা হয়। এ ছাড়া শেয়ারবাজারে পেশাদার পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন এবং কম্পানি তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রে নূ্যনতম ৪০ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধনের শর্ত শিথিলের দাবি জানিয়েছেন দুই স্টক এক্সেচেঞ্জের নেতারা।
0 comments:
Post a Comment