এপিআই পার্কের প্রাথমিক কাজ শেষের পথে : দেশেই উত্পাদন হবে ওষুধের কাঁচামাল
আমলাতান্ত্রিক নানা বাধা-বিপত্তিতে দীর্ঘ কয়েক বছর আটকে থাকার পর প্রাথমিক কাজ শেষ হয়েছে এপিআই পার্কের। আগামী বছর থেকে ওষুধের কাঁচামাল দেশেই উত্পাদন করা যাবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, ওষুধ শিল্পের কাঁচামাল উত্পাদনের জন্য এফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্লান্ট ও ডাম্পিং ইয়ার্ড সুবিধাসহ মেঘনা সেতুর কাছে বাউশিয়ায় শুরুতে ৩শ’ একর জমি অধিগ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়েছিল প্রায় তিন বছর আগে। তবে জমির পরিমাণ কমিয়ে এখন ২০০ একরের ওপর এ পার্ক নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ২১৩ কোটি টাকা। এরই মধ্যে প্রকল্পের প্রাথমিক কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এ বছরের মধ্যেই বাকি কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় নির্ধারিত আছে ২০০৮ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত। প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮৮ কোটি টাকা। উদ্যোক্তাদের সম্পদ ধরা হয়েছে ২৫ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২১৩ কোটি টাকা।
সূত্রমতে, আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে ওষুধ খাতে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) দেয়া বড় ধরনের একটি সুযোগ দীর্ঘদিন ধরেই নিতে পারছে না বাংলাদেশ।
ডব্লিউটিও’র নীতি অনুসারে স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে পেটেন্টে করা ওষুধ উত্পাদনের অনুমোদন দেয়া হলেও বাংলাদেশ এ থেকে লাভবান হয়নি। এর মধ্যেই এ সুযোগ দেয়ার প্রায় সাড়ে ৪ বছর শেষ হতে চলেছে। আর এতে ওষুধ রফতানি প্রায় তিনগুণ বাড়ানোর একটি সুযোগও হাতছাড়া হতে চলেছে।
২০০৬ সালের জানুয়ারি থেকে কার্যকর হয়ে ২০১৬ সাল পর্যন্ত পেটেম্লট ওষুধ উত্পাদনের সুযোগ দেয়া হয়েছে স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে। আর বাংলাদেশকে দেয়া হয়েছে নিজের দেশের চাহিদা মিটিয়ে বাইরে রফতানির বাড়তি সুযোগ। এর আগে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর পেটেম্লট করা ওষুধ উত্পাদনের অনুমতি ছিল না।
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা থেকে পেটেম্লট ড্রাগ তৈরির অনুমতি এবং রফতানির মতো সুযোগ পেয়েও কি কারণে বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে অগ্রসর হতে পারেনি জানতে চাইলে ওষুধ শিল্প মালিক সমিতির সাবেক এক সভাপতি জানান সরকারি সহযোগিতার অভাবের কথা। তিনি আমার দেশকে বলেন, আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে গত কয়েক বছরেও ওষুধের কাঁচামাল উত্পাদনে এপিআই শিল্প পার্ক স্থাপন করা যাচ্ছে না। ফলে ওষুধের মাত্রা পরীক্ষাগার স্থাপনও এখন অনিশ্চিত। এসব কারণে ২০১৬ সাল পর্যন্ত পেটেম্লট ড্রাগ উত্পাদনের সুযোগকে পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারছে না বাংলাদেশ।
সূত্রমতে, বর্তমানে ওষুধের কাঁচামালের প্রায় পুরোটাই আমদানিনির্ভর। প্রয়োজনের তুলনায় মাত্র ২০ থেকে ৩০ ভাগ কাঁচামাল তৈরি হচ্ছে স্থানীয়ভাবে। বাকিটা আসছে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ইতালি, চীন, জাপান ও প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে। পেটেম্লট করা ওষুধের কাঁচামালও পুরোপুরি আমদানিনির্ভর। আর এসব ওষুধের কাঁচামালের দাম এত বেশি যা যে কারো পক্ষে কিনে আনা সম্ভব নয়।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী বিশ্বের প্রায় ৮৬টি দেশে বাংলাদেশের ওষুধ রফতানি হচ্ছে। গত ২০০৭-০৮ অর্থবছরে ওষুধ রফতানির পরিমাণ ছিল ৪ কোটি ৩০ লাখ ডলার। আর পরের অর্থবছরে ২০০৮-০৯ সালে তা বেড়েছে ৬ দশমিক ২১ শতাংশ। মোট ওষুধ রফতানি হয়েছিল ৪ কোটি ৫৬ লাখ ৭০ হাজার ডলারের। ২০০৬-০৭ অর্থবছরে রফতানি হয় ১৯৪ কোটি ৩৭ লাখ ৬৬ হাজার টাকা। আর ২০০৫-০৬ অর্থবছরে রফতানি হয়েছিল ১৮৪ কোটি ৫৮ লাখ ৯৩ হাজার টাকা।
ইপিবি’র তথ্যমতে, বাংলাদেশ থেকে যেসব দেশে ওষুধ রফতানি হচ্ছে সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে অস্ট্র্রিয়া, মিয়ানমার, জার্মানি, ব্রাজিল, শ্রীলঙ্কা, পানামা, ডেনমার্ক, ব্রিটেন, নেদারল্যান্ড, কেনিয়া, ইউক্রেন, স্পেন, নেপাল, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন, পাকিস্তান, ইয়েমেন, সিঙ্গাপুর, ফ্রান্স ও দক্ষিণ আফ্রিকা। বাকি দেশগুলোতে রফতানির পরিমাণ ১ শতাংশের নিচে। প্রতি বছরই নতুন নতুন দেশ রফতানি তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে।
0 comments:
Post a Comment