তালিকাভুক্তির শর্তে আবদ্ধ : ৪৩ কম্পানি পুঁজিবাজারে আনার উদ্যোগ নেই
তালিকাভুক্তির শর্তে আবদ্ধ ৪৩ কম্পানিকে পুঁজিবাজারে আনার উদ্যোগ নেই। পরিশোধিত মূলধন ৫০ কোটি টাকার ওপরে হওয়ায় পুঁজিবাজারে আসার বাধ্যবাধকতার মধ্যে পড়েছে এ ৪৩টি কম্পানি। তবে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এঙ্চেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) নজরদারির অভাবে এসব কম্পানি পুঁজিবাজারে আসছে না।
কমিশনের আইন অনুযায়ী পরিশোধিত মূলধন ৫০ কোটি হলে বাজারে আসা বাধ্যতামূলক। না এলে কম্পানিকে প্রতিবছর এক লাখ টাকা করে জরিমানা গুনতে হবে। কিন্তু এ আইন অমান্য করে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার কোনো চেষ্টাই করছে না তালিকাভুক্তির শর্তে আবদ্ধ ৪৩ কম্পানি। কিন্তু এসব কম্পানিকে এক টাকাও জরিমানা করতে পারেনি এসইসি। এ প্রসঙ্গে এসইসির সদস্য ইয়াসীন আলী কালের কণ্ঠকে বলেন, লোকবলের অভাবে এসইসি ৫০ কোটি টাকার ওপরে মূলধন থাকা কম্পানির বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারছে না।
বাজার-সংশ্লিষ্টদের অভিমত, চরম শেয়ার সংকটের কারণে বাজার যখন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে, তখন শুধু সরকারি কম্পানির শেয়ার আনার কথা না বলে বেসরকারি কম্পানিগুলোর শেয়ার আনার ব্যাপারে উদ্যোগী হওয়া জরুরি। এ ব্যাপারে ডিএসইর প্রেসিডেন্ট শাকিল রিজভী গত ৯ অক্টোবর সংবাদ সম্মেলনে বলেন, কম্পানিকে স্থায়ীভাবে টিকে থাকতে হলে তাদের নিজেদের স্বার্থেই পুঁজিবাজারে আসা উচিত। যেসব প্রাইভেট কম্পানির পরিশোধিত মূলধন বেশি সে কম্পানিগুলোকে বাজারে নিয়ে আসার জন্য এসইসির প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
এসইসির নিয়ম অনুযায়ী, কোনো কম্পানির পরিশোধিত মূলধন ৪০ কোটি টাকায় উন্নীত হওয়ার ছয় মাসের মধ্যে তাকে পাবলিক লিমিটেড কম্পানিতে রূপান্তর করতে হবে। আর পাবলিক লিমিটেড কম্পানির পরিশোধিত মূলধন ৫০ কোটি টাকার ওপরে হলে পুঁজিবাজারে আসা বাধ্যতামূলক। তা না হলে ওই কম্পানির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কম্পানি উৎপাদনে থাকলে এক বছর ও উৎপাদন প্রক্রিয়ায় থাকলে তিন বছরের মধ্যে পুঁজিবাজারে আসতে হবে। অন্যথায় প্রতিবছর কমপক্ষে এক লাখ টাকা জরিমানা দিতে হবে।
এদিকে গত এক বছরে এসইসি প্রায় ৪০টি কম্পানিকে ৫০ কোটি টাকার ওপরে মূলধন বাড়ানোর অনুমোদন দিয়েছে। এর মধ্যে গত ছয় মাসেই ৫০ কোটি টাকার ওপরে অনুমোদন পেয়েছে ১১ কম্পানি। সম্প্রতি এসইসি এক কোটি টাকার ওপরে মূলধনী ১৩৪ প্রাইভেট কম্পানির একটি তালিকা তৈরি করেছে। এসইসির ওয়েবসাইটে এ তথ্য দেওয়া হয়েছে। এ তালিকায় ৪৩টি কম্পানির পরিশোধিত মূলধন ৫০ কোটির ওপরে রয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি কম্পানি ইতিমধ্যে পুঁজিবাজারে আসার অনুমোদন পেয়েছে।
এসইসি থেকে মূলধন বাড়ানোর অনুমোদন নেওয়া ৫০ কোটির ওপরে থাকা কম্পানিগুলো হলো_হোটেল ইন্টারন্যাশনাল (মূলধন ৫৯৩ কোটি ৩৪ লাখ ৬৩ হাজার টাকা), দ্য হংকং অ্যান্ড সাংহাই ব্যাংকিং করপোরেশন লিমিটেড (১১৬ কোটি ৫৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা), ইউনাইটেড হসপিটাল (১৭৫ কোটি ১৬ লাখ ৯৭ হাজার টাকা), টিএম ইন্টারন্যাশনালের (৯৯১ কোটি), কর্ণফুলী ফার্টিলাইজারের (৪৬০ কোটি), ইমপেরিয়াল হসপিটাল (৯৬ কোটি ৩৮ লাখ টাকা), ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কম্পানি (৬৬ কোটি টাকা), আমেরিকান সুপার স্পেসিয়ালিটি হসপিটাল (১০৮ কোটি টাকা), ফোকাস মাল্টিমিডিয়া (৭০ কোটি), সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ (৬৯ কোটি ২০ লাখ), এসটিএস হোল্ডিংস (১৫০ কোটি ৯৪ লাখ), এমআই সিমেন্ট (৭০ কোটি টাকা), সোনালী ব্যাংক (৯০০ কোটি), জনতা ব্যাংক (৩৮৪ কোটি ৩৯ লাখ টাকা), অগ্রণী ব্যাংক (২৪৮ কোটি ৪২ লাখ), আইসিবি ক্যাপিটেল ম্যানেজমেন্ট (৫৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা), পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কম্পানি (৫২ কোটি ৫৫ লাখ), টেলিটক (৬৪৩ কোটি ৮৬ লাখ টাকা), কেয়া কটন (৬৬ কোটি), ওরাসকম টেলিকম বাংলাদেশ (দুই হাজার ৪৭৬ কোটি ৪৮ লাখ), বরকতউল্লাহ ইলেকট্রো ডায়নামিক (৬০ কোটি টাকা), ঢাকা রিজেন্সি হোটেল (৫০ কোটি), এলএসআই ইন্ডাস্ট্রিজ (৮২ কোটি), বাংলাদেশ সাবমেরিন কেব্ল্ (৬৭ কোটি ৩১ লাখ), ইনফরমেশন টেকনোলজি ৫৭ কোটি, ঢাকা সাংহাই (৬১ কোটি), সামিট পূর্বাঞ্চল (৫৭ কোটি), এনার্জি প্রিমা (৬০ কোটি), মার্কেন্টাইল ব্যাংক সিকিউরিটিজ (৬৫ কোটি), জিএমজি এয়ারলাইন্স (১৬৬ কোটি ৬৬ লাখ), শাহীবাজার পাওয়ার কম্পানি (৯৬ কোটি), জিপিএইচ ইস্পাত (৫০ কোটি), দেশবন্ধু সুগার মিলস (১০০ কোটি), এআইবিএল ক্যাপিটেল মার্কেট সার্ভিসেস (২০০ কোটি), লঙ্কাবাংলা সিকিউরিটিজ (৫৫ কোটি), ট্রাস্ট ব্যাংক ইনভেস্টমেন্ট (৩০০ কোটি), সোনালী ইনভেস্টমেন্ট (১০০ কোটি), প্রাইম ব্যাংক ইনভেস্টমেন্ট (৩০০ কোটি), বেলহাসা (১০০ কোটি), ইস্পাহানি ডিস্ট্রিবিউশন (২০০ কোটি) ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (৪০০ কোটি) টাকা।
source- কালের কন্ঠ
0 comments:
Post a Comment