পুঁজিবাজারে বড় ধরনের দরপতন : ডিএসইতে সূচক কমেছে ১৮৮ পয়েন্ট : দর বেড়েছে ২৫টির, কমেছে ২১২টির
অবশেষে বড় ধরনের দরপতনের মধ্য দিয়ে শেয়ারবাজারের টানা ঊর্ধ্বগতির ছন্দপতন হলো। দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) টানা ১১ দিন সূচকে ঊর্ধ্বমুখী থাকার পর গতকাল একদিনেই পতন হয়েছে প্রায় ১৮৮ পয়েন্ট। গত ২৫ জুলাইয়ের পর ডিএসইতে এটিই একদিনে সর্বোচ্চ সূচক পতন। ওইদিন ডিএসইতে সাধারণ মূল্যসূচক কমেছিল ২০৪ পয়েন্ট। অপরদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সাধারণ সূচক কমেছে ৫৬৩ পয়েন্ট। এদিন লেনদেনকৃত অধিকাংশ কোম্পানিই তাদের শেয়ারের দর হারিয়েছে। এর ফলে বাজার মূলধনও কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে।
উভয় স্টক এক্সচেঞ্জে সূচক ও বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম কমলেও আর্থিক লেনদেন তেমন একটা কমেনি। বেশিরভাগ বিনিয়োগকারীই ব্যাংকের শেয়ারের দিকে ঝুঁকেছেন। ডিএসইতে লেনদেনের ৪০ শতাংশ ছিল ব্যাংকিং খাতের কোম্পানিগুলোর। দিনশেষে উভয় স্টক এক্সচেঞ্জের লেনদেনের শীর্ষ ১০ কোম্পানির তালিকায় বেশিরভাগই ছিল ব্যাংকিং খাতের কোম্পানি।
এদিকে বাজারে বড় ধরনের দরপতন হলেও এটিকে স্বাভাবিক বলেই মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা। তারা মনে করেন, টানা ঊর্ধ্বমুখী থাকার পর গতকাল বাজারে দর সংশোধন হয়েছে। বিনিয়োগকারীরা তাদের লাভ তুলে নেয়ার কারণে অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারের দর কমেছে।
গতকালের দরপতন সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, টানা ঊর্ধমুখী থাকার পর বাজারে স্বাভাবিক মূল্য সংশোধন হয়েছে। এ নিয়ে বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।
ডিএসইর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট নাছির উদ্দিন একই মত ব্যক্ত করে বলেন, টানা ঊর্ধ্বগতির পর সাধারণ সংশোধন হয়েছে, যা বাজারের জন্য ইতিবাচক। বড় ধরনের দরপতন হলেও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কোনো ধরনের আতঙ্ক নেই বলে তিনি মনে করেন।
অবশ্য সংশ্লিষ্টরা গতকালের দরপতনের পেছনে তিনটি কারণকে মুখ্য বলে মনে করছেন। এর মধ্যে আগের দিন ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের যৌথ সংবাদ সম্মেলনে পুঁজিবাজারকে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করে গভীর উদ্বেগ-উত্কণ্ঠা প্রকাশ করা হয়। এর ফলে বাজারে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব পড়ে। মার্জিন লোন বিষয়ে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চের রায় এসইসির পক্ষে যায়। এছাড়া টানা ঊর্ধ্বগতির কারণে বাজারে দর সংশোধন জরুরি হয়ে পড়েছিল। এই তিন কারণে শেয়ারবাজারে গতকাল বড় ধরনের দরপতন হয়েছে।
অবশ্য বিনিয়োগকারীরা ভিন্ন কথা বলছেন। তারা বলেন, শেয়ারবাজারে স্বাভাবিক নিয়মেই দর সংশোধন হবে। কিন্তু ডিএসই ও সিএসই সংবাদ সম্মেলন করায় একরকম জোর করে বাজারে দরপতন ঘটেছে। এতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
গতকাল দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনকৃত ২৪০টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে মাত্র ২৫টি কোম্পানির। অপরদিকে দর হারিয়েছে ২১২টি কোম্পানি এবং অপরিবর্তিত ছিল ৩টি কোম্পানির শেয়ারের দাম। খাতওয়ারি হিসাবে গতকাল সবকটি খাতের অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারের দর কমেছে। ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক খাত, টেলিকমিউনিকেশন, সিমেন্ট, জীবন ও সাধারণ বীমা খাতের দর ৩ শতাংশের বেশি কমেছে। অপরদিকে জ্বালানি ও ওষুধ খাতের দর কমেছে ২ শতাংশের বেশি। ব্যাংকিং খাত দর হারিয়েছে দশমিক ৪৮ শতাংশ। গতকাল লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ৩৬৪ কোটি ৭৬ লাখ টাকা, যা আগের দিনের তুলনায় ৪৩৭ কোটি টাকা কম। গতকাল মোট লেনদেনের ৪০ শতাংশই হয়েছে ব্যাংকিং খাতের কোম্পানিগুলোর। অপরদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) লেনদেন হওয়া ১৮২টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দাম বেড়েছে ২৫টির, কমেছে ১৫১টির এবং অপরিবর্তিত ছিল ৬টি কোম্পানির শেয়ারের দাম। দিনশেষে সিএসইতে লেনদেন হয়েছে ২১৭ কোটি ৫৬ লাখ ৬ হাজার টাকা, যা আগের দিনের চেয়ে ৬ কোটি ৮৯ লাখ ৫৬ হাজার ৯৫৭ টাকা কম।
ডিএসইতে লেনদেনের ভিত্তিতে (টাকায়) শীর্ষ ১০টি কোম্পানি ছিল—প্রিমিয়ার ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, পিপলস লিজিং ফাইন্যান্স অ্যান্ড সার্ভিসেস, ইউসিবিএল, বেক্সিমকো, ওয়ান ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটিজ ব্যাংক, শাহজালাল ব্যাংক ও স্কয়ার ফার্মা।
দর বৃদ্ধিতে শীর্ষ ১০টি কোম্পানি ছিল—ফুয়াং সিরামিক্স, এক্সিম ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটিজ ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, বেক্সিমকো সিনথেক্স, কোহিনূর ক্যামিকেলস, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ফুয়াং ফুড ও ২য় আইসিবি মিউচুয়াল ফান্ড।
দাম কমার শীর্ষ ১০টি কোম্পানি হলো—ইমাম বাটন, এইমস ১ম মিউচুয়াল ফান্ড, কেয়া কসমেটিক্স, ঢাকা ফিসারিজ, কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্স, বিডি অটোকারস, অগ্রণী ইন্স্যুরেন্স, স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্স, ন্যাশনাল হাউজিং ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ও ইস্টার্ন হাউজিং।
0 comments:
Post a Comment