তিন খাতেই লেনদেন ৬৩ শতাংশ : ডিএসইতে ব্যাংক, আর্থিক ও জ্বালানি খাত চাঙ্গা
প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এঙ্চেঞ্জে (ডিএসই) গতকাল ঊর্ধ্বমুখী ধারা অব্যাহত ছিল। রবিবার ডিএসইতে এক দিনে সাধারণ মূল্যসূচকের যে পতন ঘটেছিল গত দুদিনের ধারাবাহিক ঊর্ধ্বগতি সত্ত্বেও পুরোপুরি পুনরুদ্ধার হয়নি। রবিবার এক দিনেই সূচক কমেছিল প্রায় ১৮৮ পয়েন্ট। সেখানে গত দুদিনে মিলে ডিএসইর সাধারণ সূচক বেড়েছে ১৭০ পয়েন্ট।
আগের দিনের মতো গতকালও দিনের শুরু থেকেই ডিএসইতে শেয়ারের দাম ছিল ঊর্ধ্বমুখী। যার ইতিবাচক প্রতিফলন ছিল সূচকেও। সোমবার ডিএসইতে বেশির ভাগ শেয়ারের দাম বাড়লেও লেনদেন কমেছিল। গতকাল দুই-ই বেড়েছে ওই বাজারে।
গতকাল দিনশেষে ডিএসইর সাধারণ সূচক আগের দিনের চেয়ে ৬৭ পয়েন্টে বেড়ে হয়েছে ৭৪৬৩। একই সঙ্গে বেড়েছে সার্বিক মূল্যসূচকও। মঙ্গলবার তা আগের দিনের চেয়ে ৫২ পয়েন্টে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬২০৩-এ।
বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, ডিএসইতে গতকাল লেনদেনের সিংহভাগ জুড়েই ছিল ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের কম্পানিগুলো। মোট লেনদেনের ৬৩ শতাংশ জুড়েই ছিল এ তিনটি খাত। টাকার অঙ্কে ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের ৬২ কম্পানির লেনদেনের পরিমাণ ছিল ১২৬৯ কোটি টাকা। পাশাপাশি মঙ্গলবার বীমা খাতের লেনদেন হওয়া বেশির ভাগ শেয়ারেরও দাম বেড়েছে।
সোমবারের মতো গতকালও সূচক বাড়ার পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে টেলিকম খাতের একমাত্র কম্পানি গ্রামীণফোন, ব্যাংক, বীমাসহ মৌলভিত্তিসম্পন্ন কম্পানিগুলো। মঙ্গলবার গ্রামীণফোনের প্রতিটি শেয়ারের দাম আগের দিনের চেয়ে সাত টাকা বেড়ে হয়েছে ২৬৪ টাকা। এ একটি কম্পানির শেয়ারের দাম বাড়ার কারণেই সূচক বেড়েছে প্রায় ২০ পয়েন্টেরও বেশি। ডিএসইর হিসাবে গ্রামীণফোনের শেয়ারের দামের এক টাকা বাড়া-কমার কারণে সূচকের তারতম্য ঘটে প্রায় তিন পয়েন্ট।
এদিকে গতকাল লেনদেনের শুরু থেকে বাড়তে থাকে বেশির ভাগ শেয়ারের দাম। প্রথম ১ ঘণ্টায় শতাধিক কম্পানি ছিল দাম বাড়ার তালিকায়। দাম কমার তালিকায় ছিল অর্ধশতাধিক কম্পানি। দুপুর পর্যন্ত এ ধারা অব্যাহত ছিল। কিন্তু দুপুরের পর তাতে কিছুটা ছন্দপতন ঘটে। কমতে থাকে শেয়ারের দাম। একপর্যায়ে শতাধিক কম্পানির শেয়ার আগের দিনের চেয়ে দাম হারায়।
এই সময় বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এঙ্চেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) সঙ্গে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তাদের বৈঠকের খবর ছড়িয়ে পড়ে। যাতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এই বৈঠকে সাম্প্রতিক বাজারসম্পর্কিত কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়নি বলে নিশ্চিত করেন এসইসি মুখপাত্র আনোয়ারুল কবীর ভূঁইয়া। তিনি জানান, বৈঠকে গত বাজেটে শেয়ারবাজারের ওপর আরোপিত কর আদায়ের পন্থা নিয়ে আলাপ-আলোচনা হয়েছে। তবে এসইসি ও এনবিআরের বৈঠক আতঙ্কের রেশ ছিল লেনদেনের শেষ অবধি। আর তাই দিনশেষে ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ২৪৬ কম্পানির মধ্যে ১০৩টিই দাম হারায়। দাম বেড়েছে ১৩২টির আর অপরিবর্তিত ছিল ১১টির দাম।
জানতে চাইলে ডিএসইর পরিচালক শরীফ আতাউর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, 'বর্তমানে বাজার বেশ ভালো আচরণ করছে। বিনিয়োগকারীরা এখন মৌলভিত্তির কম্পানির দিকে ঝুঁকছে। এটি খুবই ইতিবাচক দিক। বিনিয়োগকারীরা যদি নিয়ম-কানুন মেনে এ ধরনের আচরণ অব্যাহত রাখে তাহলে উদ্বেগের কিছু নেই। মৌলভিত্তির কম্পানির দাম বাড়ার মাধ্যমে যদি বাজারের সূচক বাড়ে তাতে আতঙ্কিত হওয়ারও কিছু নেই।'
সার্বিক লেনদেনের দিক থেকেও ভালো অবস্থা ছিল ডিএসইতে। গতকাল দিনশেষে ওই বাজারে প্রায় দুই হাজার ১৯ কোটি টাকার লেনদেন হয়, যা আগের দিনের চেয়ে ৪৫৪ কোটি টাকা বেশি।
0 comments:
Post a Comment