লোনের মামলায় হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত
পুঁজিবাজারের মার্জিন ঋণ ও নেটিং সুবিধাসংক্রান্ত মামলায় হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করে দিয়েছেন সুুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। এ-সংক্রান্ত রুলের শুনানি শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ স্থগিতাদেশ বহাল থাকবে বলে আদেশ দেন আদালত। প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের নেতৃত্বে গঠিত আপিল বিভাগের তিন সদস্যের বেঞ্চ গতকাল এ আদেশ দেন। অন্য বিচারপতিরা হলেন, বিচারপতি মোজাম্মেল হোসেন ও বিচারপতি এস কে সিনহা। মার্জিন ঋণসংক্রান্ত মামলায় হাইকোর্টের স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে এসইসির পক্ষ থেকে করা আপিল আবেদনের শুনানিশেষে গতকাল আদালত এ আদেশ দেন।
আপিল বিভাগের এ আদেশের ফলে শেয়ারের বাজারমূল্য ও প্রকৃত সম্পদমূল্যের (এনএভি) অর্ধেকের ভিত্তিতে মার্জিন ঋণ নির্ধারণ ও ঋণ-অযোগ্য কম্পানির শেয়ারের নেটিং সুবিধা বন্ধসহ গত ৬ ও ২১ সেপ্টেম্বর জারি করা পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এঙ্চেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) দুটি প্রজ্ঞাপনের সব নির্দেশনা কার্যকর হবে।
গতকালের শুনানিতে এসইসির পক্ষে অংশ নেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। রিটকারীর পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ, ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস ও ব্যারিস্টার আবুল কালাম আজাদ।
শেয়ারের বাজারমূল্য ও প্রকৃত সম্পদমূল্যের (এনএভি) অর্ধেকের ভিত্তিতে মার্জিন ঋণ নির্ধারণ এবং ঋণঅযোগ্য কম্পানির শেয়ারের নেটিং সুবিধা বন্ধসহ গত ৬ ও ২১ সেপ্টেম্বর জারি করা দুটি প্রজ্ঞাপন জারি করে এসইসি। এসইসির এসব নির্দেশনাকে চ্যালেঞ্জ করে গত ২৬ সেপ্টেম্বর মোর্শেদুর রহমান ও শাহনেওয়াজ জুয়েল নামে দুই বিনিয়োগকারীর পক্ষে ব্যারিস্টার আবুল কালাম আজাদ হাইকোর্টে রিট আবেদন দাখিল করেন। তাদের আবেদনের ভিত্তিতে ২৭ সেপ্টেম্বর বিচারপতি মামনুন রহমান এবং বিচারপতি সৈয়দা আফসার জাহানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এসইসির নির্দেশনা দুটির কার্যকারিতার ওপর তিন মাসের স্থগিতাদেশ দেন। আদালত একইসঙ্গে নির্দেশনা দুটিকে কেনো আইনবহির্ভূর্ত ও অবৈধ ঘোষণা করা হবে না_তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। অর্থ মন্ত্রণালয়, এসইসি, ঢাকা স্টক এঙ্চেঞ্জ (ডিএসই) এবং চট্টগ্রাম স্টক এঙ্চেঞ্জকে (সিএসই) চার সপ্তাহের মধ্যে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়। হাইকোর্টের স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে পরের দিন ২৮ সেপ্টেম্বর আপিল আবেদন করে এসইসি। পরে গত ৪ অক্টোবর এ-সংক্রান্ত মামলায় হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত না করে শুনানির জন্য আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন চেম্বার জজ আদালতের বিচারপতি মোহাম্মদ মোজাম্মেল হোসেন। শেয়ারের বাজারমূল্যের সঙ্গে প্রকৃত সম্পদমূল্য (এনএভি) সমন্বয় করে মার্জিন নির্ধারণের জন্য গত ৬ সেপ্টেম্বর একটি নির্দেশনা জারি করে এসইসি। নির্দেশনায় বলা হয়, এনএভি ও বাজারমূল্যের যোগফলের অর্ধেকের ভিত্তিতে কোনো কম্পানির শেয়ারের বিপরীতে মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউসগুলো কী পরিমাণ ঋণ দিতে পারবে_ডিএসই প্রতিসপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে তা নির্ধারণ করবে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কম্পানি বা মিউচ্যুয়াল ফান্ডের সর্বশেষ ঘোষিত আর্থিক বিবরণীতে উল্লেখিত এনএভির ভিত্তিতে মার্জিন নির্ধারণ করা হবে। ডিএসইর দেওয়া এই হিসাবের ভিত্তিতে মার্চেন্ট ব্যাংকার এবং দুই স্টক এঙ্চেঞ্জের আওতাধীন ব্রোকারেজ হাউসগুলো গ্রাহকদের ঋণ প্রদান করবে।
নির্দেশনায় আরো বলা হয়, ডিএসই নির্ধারিত মার্জিন হিসাব করে মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউস প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট বিধিমালা অনুযায়ী গ্রাহককে অতিরিক্ত অর্থ জমা দিতে বলবে (মার্জিন কল)। সংশ্লিষ্ট গ্রাহক ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে অতিরিক্ত টাকা জমা দিতে ব্যর্থ হলে মার্জিন বিধিমালা অনুযায়ী ব্রোকারেজ হাউজ বা মার্চেন্ট ব্যাংক তার হিসাবে থাকা শেয়ার বাধ্যতামূলক বিক্রি (ফোর্স সেল) করে ঋণ সমন্বয় করার আদেশ দেওয়া হয়। একই নির্দেশনায় মার্জিন ঋণ পাওয়ার জন্য অযোগ্য কম্পানির শেয়ার লেনদেনের ক্ষেত্রে সমন্বয় (নেটিং) সুবিধা বাতিল করা হয়। মার্জিন ঋণ হিসাবের ক্ষেত্রে এসইসির এ নির্দেশনায় কিছু বিষয়ে অস্পষ্টতা থাকায় ২১ সেপ্টেম্বর আরেকটি নির্দেশনা জারি করা হয়। এতে ঋণ নির্ধারণে ডিএসইকে দায়িত্ব প্রদানের পাশাপাশি এনএভি হিসাবের ক্ষেত্রে কম্পানির সম্পদ পুনর্মূল্যায়নের হিসাব বিবেচনায় না নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। এ ছাড়া শেয়ারের মূল্য অনুপাতে আয় বা পিই অনুপাত হিসাবের ক্ষেত্রে কম্পানির মূল ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আয় বিবেচনারও নির্দেশ দেওয়া হয়।
0 comments:
Post a Comment