সর্বোচ্চ পরিমাণে লেনদেন কমেছে ডিএসইতে : লেনদেন কমেছে ৮০০ কোটি টাকা
আগের দিনের তুলনায় সর্বোচ্চ পরিমাণ লেনদেন কমেছে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই)। গতকাল অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারের দরবৃদ্ধির কারণে সূচকের বড় ধরনের উল্লমম্ফন হলেও লেনদেনের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে। আগের দিন ডিএসইতে লেনদেন হয়েছিল ২ হাজার ৩৬৪ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। গতকাল তা কমে হয়েছে ১ হাজার ৫৬৪ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। অর্থাত্ একদিনের ব্যবধানেই ডিএসইতে লেনদেন কমেছে ৭৯৯ কোটি ৯১ লাখ টাকা যা আগের দিনের তুলনায় ৩৩ শতাংশ কম। একদিনের ব্যবধানেই লেনদেন কমে যাওয়ার দিক থেকে এটিই সর্বোচ্চ। এর আগে গত ১৭ জুন তার আগের দিনের তুলনায় লেনদেন কমেছিল ৭৯৭ কোটি ৮৪ লাখ টাকা।
বাজার বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আগের দিন বড় ধরনের পতনের কারণে অধিকাংশ বিনিয়োগকারী কিছুটা সতর্ক অবস্থানে ছিল। এ কারণে লেনদেনে বড় ধরনের প্রভাব পড়ে। বেসরকারি সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান এলিয়েন্স ক্যাপিটাল অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওয়ালি উল মারুফ মতিন বলেন, ডিএসই এবং সিএসইর যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বাজার নিয়ে উদ্বেগ-উত্কণ্ঠা প্রকাশ করায় বাজারে আগের দিন বড় ধরনের পতন ঘটেছিল। অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারের দরপতন হয় ওইদিন। ফলে অধিকাংশ বিনিয়োগকারীই শেয়ার বেচাকেনার চেয়ে বাজার পর্যবেক্ষণ করেছেন। এ কারণে বাজারে উল্লেখযোগ্যহারে লেনদেন কমেছে।
তবে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের আদেশের কারণে এনএভিভিত্তিক মার্জিন ঋণ বিতরণ পদ্ধতি কার্যকর, মার্জিন অযোগ্য ঋণ কোম্পানির শেয়ারের বিপরীতে নেটিং সুবিধা বন্ধ ও অতিরিক্ত ঋণ সমন্বয়ে মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউসের বাধ্যবাধকতার কারণে বাজারে লেনদেন কমেছে। এছাড়া ব্যাংকগুলো শেয়ারবাজারে অতিরিক্ত যে বিনিয়োগ করেছে তা তুলে নিতে শুরু করেছে বলে মনে করছেন অনেকে। এসব কারণে শেয়ারবাজারে বড় ধরনের লেনদেন কমেছে বলে অনেক বাজার বিশ্লেষকদের ধারণা।
এদিকে তারল্য প্রবাহ কমলেও শেয়ারবাজারে সূচকের বড় ধরনের উল্লমম্ফন হয়েছে। গতকাল লেনদেনকৃত অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারেরই দর বেড়েছে। ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেয়া ২৪৫টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১৮৯টির, কমেছে ৪৯টির এবং অপরিবর্তিত ছিল ৭টির দাম। অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারের দরবৃদ্ধির কারণে আগের দিনের তুলনায় ডিএসই সাধারণ সূচক বেড়েছে ১০৩ পয়েন্ট। দিনশেষে ডিএসই সাধারণ মূল্যসূচক ৭ হাজার ৩৯৬ পয়েন্টে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া ডিএসআই সূচক ৮৩ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ১৫০ পয়েন্টে এবং ডিএসই-২০ সূচক ৬০ পয়েন্ট বেড়ে ৪ হাজার ৩৭৪ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
ডিএসইতে ব্যাংকিং খাত ছাড়া সব ক’টি খাতের অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারের দাম বৃদ্ধি হয়েছে। সূচক বৃদ্ধিতে সবচেয়ে বড় অবদান ছিল টেলিকম খাতের একমাত্র কোম্পানি গ্রামীণফোনের। ৪ শতাংশেরও বেশি সূচক বৃদ্ধি হয়েছে গ্রামীণফোনের শেয়ারের দরবৃদ্ধির কারণে। সূচক বৃদ্ধিতে এরপরেই ছিল সাধারণ বীমা ও ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক খাতের কোম্পানিগুলোর অবদান।
গতকাল সূচকের ঊর্ধ্বমূখী ধারা দিয়েই শুরু হয় দিনের লেনদেন। প্রথম ৪০ মিনিটে লেনদেনে অংশ নেয়া অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারের দর বাড়তে থাকায় এ সময় আগের দিনের তুলনায় সূচক প্রায় ৩৫ পয়েন্ট বেড়ে যায়। কিন্তু এরপর বিনিয়োগকারীদের মধ্যে লাভ তুলে নেয়ার বিশেষ করে ব্যাংকিং খাতের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে লাভ তুলে নেয়ার প্রবণতা তৈরি হওয়ায় ডিএসই সূচকের পতন হতে থাকে। বেলা ১২টা ১০ মিনিট পর্যন্ত সূচকের পতন ঘটে। তবে এরপর ব্যাংকিং খাতের কোম্পানি কিছুটা ঘুরে দাঁড়ায়। যদিও দিনশেষে ব্যাংকিং খাতের সূচক কমেছে আগের দিনের তুলনায় দশমিক ১৩ শতাংশ। অবশ্য লেনদেনের শীর্ষ ১০টি কোম্পানির মধ্যে ৫টিই ছিল ব্যাংকিং খাতের কোম্পানি।
ডিএসইতে লেনদেনের ভিত্তিতে (টাকায়) শীর্ষ ১০টি কোমপানি হলো— প্রিমিয়ার ব্যাংক, পিপলস্ লিজিং ফাইন্যান্স এন্ড সার্ভিসেস, উত্তরা ফাইন্যান্স, সামিট পাওয়ার, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, শাহ্জালাল ব্যাংক, লঙ্কাবাংলা ফাইন্যান্স, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক , বেক্সিমকো ও এক্সিম ব্যাংক।
দরবৃদ্ধিতে শীর্ষ ১০টি কোমপানি হলো—উত্তরা ফাইন্যান্স, বাংলাদেশ জেনারেল ইন্সুরেন্স, বিডি ফাইন্যান্স, সোনারগাঁও টেক্সটাইল, পিপলস্ লিজিং ফাইন্যান্স এন্ড সার্ভিসেস, কন্টিনেন্টাল ইন্সুরেন্স, অগ্রণী ইন্সুরেন্স, মেঘনা লাইফ ইন্সুরেন্স, ১ম বিএসআরএস ও সেন্ট্রাল ইন্সুরেন্স। দাম কমার শীর্ষ ১০টি কোমপানি হলো—ডেল্টা ব্র্যাক হাউজিং, কোহিনূর কেমিক্যাল, লিব্রা ইনফিউশন, বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন, স্টাইলক্র্যাফট, মুন্নু ফেব্রিকস্, ফার্মা এইডস্, ফু-ওয়াং সিরামিক, অ্যাম্বী ফার্মা ও ফার্স্ট সিকিউরিটিজ ব্যাংক।
source:amardesh
0 comments:
Post a Comment