মিউচুয়াল ফান্ডে ঋণ দিচ্ছে না মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউসগুলো
মার্জিন ঋণ সুবিধার আওতায় থাকলেও মিউচুয়াল ফান্ডের গ্রাহকদের সে সুবিধা দিতে চাচ্ছে না মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউসগুলো। বর্তমানে অতিমূল্যায়িত ও ঝুঁকিপূর্ণ বাজারে দর সংশোধন শুরু হলে ফান্ডগুলোর সম্পদ মূল্যে বড় ধরনের পতন হতে পারে—এমন আশঙ্কায় গ্রাহকদের ঋণ সুবিধা দিচ্ছে না তারা। তবে এসইসির নির্দেশ অনুযায়ী ঋণ সুবিধা প্রাপ্য হওয়া সত্ত্বেও তা না দেয়ায় গ্রাহকদের মধ্যে এ নিয়ে রয়েছে অসন্তোষ। বিনিয়োগকারীরা জানান, অতীতে মার্জিন লোন দেয়ার ক্ষেত্রে তেমন কোনো কড়াকড়ি ছিল না। এখন বাজারের ঝুঁকির বিষয়গুলো বিবেচনা করেই নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি) মার্জিন লোনের সীমা বেঁধে দেয়ার পাশাপাশি আরও বেশকিছু শর্ত জুড়ে দিয়েছে। এখন কমিশনের সে শর্ত অনুযায়ী গ্রাহকদের ঋণ দেয়ার বিষয়ে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর আপত্তির কারণ থাকতে পারে না।
তবে ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, মার্জিন ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে এসইসি শুধু যোগ্যতা ও ঋণের সর্বোচ্চ সীমা বেঁধে দেয়। এই নিয়মের মধ্যে ঋণ দেয়া হবে কিনা কিংবা দিলেও কী হারে দেয়া হবে, তা সম্পূর্ণভাবে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করে।
বাজারমূল্য ও আয়ের (পিই) অনুপাত ৪০-এর নিচে থাকায় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তালিকা অনুযায়ী বর্তমানে ২৮টি মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ২৫টিই ঋণ পাওয়ার যোগ্য। কিন্তু মিউচুয়াল ফান্ড ইউনিট কেনার জন্য বিনিয়োগকারীরা ঋণ সুবিধা চাইলেও গত দেড় মাসে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া পাচ্ছে না তারা।
গত ৩০ আগস্ট অনুষ্ঠিত এসইসির বাজার পর্যালোচনা কমিটির সভায় শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত মিউচুয়াল ফান্ড ইউনিটের বিপরীতে মার্জিন ঋণ সুবিধা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। মিউচুয়াল ফান্ডের বাজারমূল্য এর প্রকৃত সম্পদমূল্যের (এনএভি) তুলনায় ১৫০ শতাংশ বেশি না হলে ওই ফান্ডের বিপরীতে মার্জিন ঋণ প্রদানের সুযোগ দেয়া হয়। ওইদিনই কমিশনের পক্ষ থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে ২ সেপ্টেম্বর থেকে নতুন নিয়ম কার্যকর করা হয়। কিন্তু দেড় মাস পার হলেও মিউচুয়াল ফান্ড ইউনিটের বিপরীতে ঋণ দিচ্ছে না প্রায় সবগুলো মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউস।
এসইসির নির্দেশনা অনুযায়ী পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ২৮টি মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে সর্বশেষ বাজারমূল্য অনুযায়ী ২৫টি ফান্ডই ঋণ পাওয়ার যোগ্য। গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ডিএসইর ঋণ তালিকায় ২৫টি মিউচুয়াল ফান্ডের প্রাপ্য ঋণের হিসাব উল্লেখ করা হয়েছে। আগের সপ্তাহে এ তালিকায় ২৪টি মিউচুয়াল ফান্ড ঋণ পাওয়ার যোগ্য ছিল। কিন্তু গ্রাহকদের অভিযোগ, মিউচুয়াল ফান্ড ইউনিট কেনার জন্য ঋণ সুবিধা চাইলেও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো অপারগতা প্রকাশ করছে। এজন্য একেক হাউসে একেক কারণ দেখানো হয়েছে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব সিদ্ধান্তেই ঋণ সুবিধা বন্ধ রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে একাধিক মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউসের কর্মকর্তার কাছে জানতে চাওয়া হলে তারা বলেন, এসইসির নির্দেশনা অনুযায়ী অনেকগুলো মিউচুয়াল ফান্ডই ঋণ পাওয়ার যোগ্য। তবে অতীতে মিউচুয়াল ফান্ড ইউনিটে ঋণ দিয়ে অনেক প্রতিষ্ঠানই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাজারের বর্তমান পরিস্থিতিতে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানই মিউচুয়াল ফান্ডে ঋণ দেয়ার ঝুঁকি নিতে চাইছে না। কারণ শেয়ারবাজার বর্তমানে যে অবস্থানে আছে তাতে বড় ধরনের মূল্য সংশোধন হলে মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর এনএভি অনেক কমে যাবে।
0 comments:
Post a Comment